লেখাটা একটু অন্যভাবে শুরু করি আজকে। আমার ছোট খালার ছেলে “সানিম” এই ব্লগের আলতু-ফালতু টাইপ (!) লেখাগুলো পড়ে জিজ্ঞেস করসিলো- ভাই আপনি Topics আইডিয়াগুলো কিভাবে পান?
সানিমকে সেদিন বলসিলাম এইটা নিয়ে একটা লিখা লিখবো। ওয়াদা রক্ষার মিশনে নামলাম অবশেষে।
আজকের বিষয়বস্তু লজিক্যাল ফ্যালাসি, বাংলায় বললে কুযুক্তি। এই শব্দগুচ্ছ প্রথম নজরে আসে আরিফ আজাদের “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” পড়ার সময়। সে অনেকদিন আগের কথা। বইয়ে কোন একটা ব্যাপার বোঝাতে উনি একটা উদাহরণ টানেন যেটা ছিলো এরকম- “ভাই, আপনি কি এখনো বউ পিটান?” এখন, এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা নাতে লিমিটেড করে দিলে উত্তরদাতা কিন্তু প্যাঁচে পড়বেন। এটাই লজিক্যাল ফ্যালাসির একটা উদাহরণ। একটু স্পেসিফিকভাবে বললে, এটা আসলে False dilemma fallacy’র উদাহরণ। একটু পরেই আমরা ব্যাপারগুলা জানবো।
পাঠক একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আরিফ ভাই উনার বইয়ের মাধ্যমে যে বীজটা সেদিন বপন করসিলেন সময়ের পরিক্রমায় সেটা আজ শোভিত বৃক্ষের রূপ ধারণ করসে। ওই শব্দগুচ্ছ জানার পরে এবং অতি-অবশ্যই ভালো লাগার কারণে নানান সময়ে অন্তর্জালে এই ব্যাপারে একটু একটু করে পড়া হইসে। সেই বিন্দু বিন্দু জিনিসগুলোই আজ একজায়গায় লিখে ফেলার ইচ্ছা হলো।
লজিক্যাল ফ্যালাসি কী?
লজিক্যাল ফ্যালাসি হলো যুক্তির ত্রুটি যেটি যুক্তির বৈধতাকে দুর্বল করে দেয়।
এই ব্যাপারগুলো আমরা অনেকেই ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ব্যবহার করে থাকি শুধুমাত্র নামগুলা হয়তোবা জানিনা।
- Ad Hominem: ইউনিভার্সিটিতে থাকতে তপু এই কাজটা করতো। কারো সাথে তর্ক হইলেই তারে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতো।
যখন কেউ মূল আর্গুমেন্ট বাদ দিয়ে আর্গুমেন্টকারীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, সেটাই Ad Hominem.
উদাহরণঃ
আরিফঃ “আধুনিক বিজ্ঞান বলতেসে- মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা যা দেখি সেটা মাত্র ৫ ভাগ, বাকী ৯৫ ভাগই ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি হিসেবে আমাদের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছে।”
তপুঃ “তুই তো বেটা শিশু”.. তুই এসবের কি জানস? তুই কি নাসার বিজ্ঞানী? - Straw Man Fallacy: মূল ব্যাপারকে মিস-ইন্টারপ্রেট কিংবা বিকৃত করে তুলনামূলক সহজ যুক্তিতে অপরপক্ষকে ঘায়েল করে দেয়া।
উদাহরণঃ
অথোরিটিঃ “অপচয়রোধ করার জন্য স্কুলের লাঞ্চ বাজেট পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।”
অভিভাবকঃ “এই কর্তৃপক্ষ আমাদের বাচ্চাদের উপোস মারতে চায়।” - Bandwagon Fallacy: কোন কিছু জনপ্রিয় বা সর্ব-সাধারণ বিশ্বাস করে এজন্য জিনিসটাকে সত্য বলে ধরে নেয়া।
উদাহরণঃ
বেশীরভাগ মানুষই তাবিজ বিশ্বাস করে। তারমানে তাবিজ সত্য।
সবাই কোকাকোলা খায়। তার মানে বাজারে এরচেয়ে ভালো কোনো কোল্ড ড্রিংস নাই। - False Dilemma: দুইটা চয়েসে বেঁধে দেওয়া যেখানে আরো চয়েস থাকতে পারে। এটাকে either/or ফ্যালাসি ও বলা হয়।
এই ক্ষেত্রে একটা জটিল সিচুয়েশানকে সীমাবদ্ধ চয়েস দিয়ে ওভার-সিমপ্লিফাই করে অপরপক্ষকে এক ধরণের কনক্লুশানে যেতে বাধ্য করা হয়, যা আসলে তার নিজের বক্তব্য না।
উদাহরণঃ
রিপনঃ “ভাই, আপনি তো ফ্যামিলির সাথে থাকেন। আপনার তেমন কোন খরচ নাই। প্রচুর জমাচ্ছেন তাইলে ভাই!!”
শাহীনঃ “ভাই, আমার ইনকাম তো বেশী না।”
[ খরচ কম মানে সঞ্চয় বেশী, ব্যাপারটা সত্যি নাও হইতে পারে ] - Slippery Slope Fallacy: আমার পছন্দের একটা ফ্যালাসি। এটা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে শুনে অভ্যস্থ।
সন্ধ্যায় পড়তে না বসলে – মাঃ- “ঠিকমত না পড়লে তো পরীক্ষায় ডাব্বা মারবি, এরপর রাস্তায় রাস্তায় বাদাম বেচবি, কোন বাপ মেয়ে দিবে না।”
একটা নেগেটিভ কাজের কারণে সিরিজ অফ নেগেটিভ ব্যাপার ঘটবে বলে ধারণা করা, যে ব্যাপারে আদতে কোন পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ নাই।
উদাহরণঃ
লাইব্রেরীতে বসে কিছু খাবেন না।
এর কারণে সেখানে পিঁপড়া চলে আসতে পারে।
লাইব্রেরী হলো জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। পিঁপড়ারা সেই জ্ঞান আহরণ করে ক্ষমতা লাভ করে ফেলতে পারে যেহেতু নলেজ ইজ পাওয়ার।
আবার Power corrupts তাই পিঁপড়ারা মানুষদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলতে পারে।
[ লাইব্রেরীতে বসে খাবার খাওয়ার কুফল ] - Red Herring Fallacy: আর্গুমেন্ট চলাকালে কোন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে এনে মূল আলোচনা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।
উদাহরণঃ
পুলিশ রাস্তায় রুনির গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চাইলো।
রুনি বললো- “সারাদেশে ভয়ংকর সব অপরাধীরা আকাম-কুকাম করে বেড়াচ্ছে আর আপনারা আছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট এসব নিয়ে।”
আরো অনেকগুলো লজিক্যাল ফ্যালাসি আছে। আগ্রহীরা গুগল করে নিবেন। আজ এই পর্যন্তই।
